Sunday, November 1, 2020

কথপোকথন

আজ খুব মটকা গরম হয়ে গিয়ে ঘুমটা ভাঙ্গলো সকাল ৭ টার সময়।

উঠে বুঝলাম ব্যাপারটা।

ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী দুটো আবার কথা শুরু করেছে!!

বুঝলেন না তো?

আরে কিছু না, আমাদের বাড়ীতে দুটো মুখোশ আছে। তারা খাটের পাশের দেওয়ালে ঝুলে থাকে।
সেটা সমস্যা নয়। মুশকিল হল যে তারা মাঝে-মধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে।

একটু ভড়কে গেলেন কি?
আপনার কোন দোষ নেই।

ব্যাপারটা খোলসা করতে দিন।

অনেকদিন আগের কথা। ঘরে বসে কিছু একটা করছিলাম মন দিয়ে।

“কবিতা লিখছিস?”

বললাম “হ্যাঁ”।

আবার লিখতে লাগলাম।

“একটু পড়ে শোনা না”

আচ্ছা মুশকিল হল।

ঝাঁঝিয়ে উত্তর দিতে গিয়ে চমকে উঠলাম!!
ঘরে তো আমি একা আছি!!!

গা-টা বেশ শিরশির করে উঠলো (আমি এমন কিছু বীরপুঙ্গব নই)।
কবিতা উঠলো মাথায়।

এই ভর-সকালে এরকম অশরীরী ব্যাপার, ভাল্লাগে না। ধুর ধুর!

একটু চুপ করে বসে রইলাম।

হঠাত – “লে হালুয়া, ভয় পেলি নাকি?”

এক ঝটকায় আমি খাটের কোনায়, দেওয়াল-এ পিঠ! (বললাম তো আগেই, তেমন কিছু সাহসী নই, হাসছেন কেন?!!)।

৫ মিনিট ধরে চুপচাপ বসে রইলাম।
একটু মাথাটা শান্ত হলে মনে হল যে এইভাবে দিনের বেলায় ভয় পাবো!! কি মেয়েলী ব্যাপার!!
(মহিলারা আমার মুন্ডুপাত করার আগেই বলে দি, এই কথাটা মূলত ওই আরশোলা দেখে বাড়ী মাথায় করার ব্যাপারটা মাথায় রেখে বলা, ওটাকেই বেঞ্চমার্ক ধরেছি আপাতত।)

একটু এদিক-ওদিক দেখলাম – বোঝার চেষ্টা করলাম আওয়াজটা কোন দিক থেকে এল!!

শিওর হতে পারলাম না!

ভাবলাম, একটু উঠে কিছু করি বরং, মাথাটা হয়তো ঘেঁটে গ্যাছে।

শুকিয়ে যাওয়া জামাকাপড় পাট করলাম।
ঘরের কোনায় ঘুড়িগুলো হেলে শুয়ে ছিল, সোজা করলাম।
পাশের বাড়ীর অদ্ভুত সুরে গান করা (গাধার চিৎকার বললে আপনাদের বুঝতে একটু সুবিধা হবে বোধহয়) মেয়েটাকে আমার জানলার আড়াল থেকে দুটো কাঁচা দিলাম।

এইবার মনে বেশ শান্তি নিয়ে, মুচকি হেসে, দেওয়ালের মুখোশগুলো ঝাড়তে এলাম – বড্ড ধুলো পড়েছিল।

“বাহ, কবিতা শোনাতে বললাম, শোনালি না, এখন আবার মুখে এই নোংরা কাপড়টা বোলাচ্ছিস!”

উরেহ শালা!!

মেঝে থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

“আশ্চর্য! ভড়কাচ্ছিস কেন রে?”

নাহ, নাচবো তো!!

তো, যাই হোক, এইভাবেই শুরু।
(সেই কবিতাটার কি হল জিগ্যেস করবেন না, ওটা পুরো ঝোল হয়ে গিয়েছিল। এমন নয় যে পুরো লিখতে পারলে দেশ পত্রিকায়ে প্রকাশিত হত!! তবু!)

একদিন স্কুল থেকে ফিরে খেলতে যাব বলে তৈরি হচ্ছি।

হঠাত ব্যাঙ্গমা বলে উঠলো – “আরে মোলো যা, তোর কি কোন আক্কেল নেই, ব্যাঙ্গমীর সামনে!! ছি ছি!”

কি মুশকিল!! এতো নতুন ঝামেলা যুটলো!!

ব্যাঙ্গমী আরেক পিস!!
“দ্যাখ ব্যাঙ্গমা, ছেলেটার গড়নটা কিন্তু বেশ ভাল”

কান-টান লাল হয়ে গেল।

“দ্যাখ দ্যাখ ব্যাঙ্গমা, আবার লজ্জা পাচ্ছে! হি হি।”

কোথায় পালাই!!

“তুই হাসছিস ব্যাঙ্গমী!! এই বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে!! ছি ছি, তুই কি নির্লজ্জ!! ওদিকে তাকাবি না বলছি”

“আশ্চর্য! এই বয়েসেও তোর এত হিংসে কেন রে!!”

“কিসের হিংসে!! হাজার হোক, একটা উঠতি বয়েসের ছেলে, ইয়ে – মানে, তৈরি হচ্ছে, তুই দেখবি!!”

“আচ্ছা!! এখন আমাকে বলছিস!! আর তুই যে এবাড়ি আসার আগে সেই দোকানির বউএর সঙ্গে সারাদিন গল্প করতিস, সে বেলা!!”

শুরু হয়ে গেল দুটোর!

সত্যি বলতে কি, মাঝে মাঝে ভালোই লাগে এদের এই ঝগড়া আর খুনসুটি।

“প্রেম করছিস?” – হঠাত একদিন ব্যাঙ্গমীর প্রশ্ন।

“কি করে বুঝলি?” – জিগ্যেস করলাম।

“ওরে, বয়েস তো কম হল না, এসব বুঝি”

কথা ঘোরাতে হবে, নইলে এখুনি আমার গুষ্ঠীর পিণ্ডি উদ্ধার করবে।

বললাম – “কত বয়েস তোদের? দেখে তো কিছু বোঝা যায় না!”

ব্যাঙ্গমী একটা কান এঁটো করা হাসি হাসল।
(হাজার হোক, নারীজাতি তো!)

“তাও, নয় নয় করে একেবারে কম হল না রে। তবে ঠিক মনে থাকে না এখন।
ব্যাঙ্গমা, তোর মনে আছে?”

“অ্যাঁ! ওহ, বয়েস?
তা কি করে বলি। অর্ধেক সময় তো তোর সঙ্গে ঝগড়া করেই কেটে গেল, বয়েস হিসেব করার সময় পেলাম কোথায়ে?!”

“কি বললি!! আমি ঝগড়া করি তোর সঙ্গে?!”

উফফ, আবার শুরু হল এই দুটোর!

তবে, সবসময়ে যে ঝগড়া করত তাও নয়।

একদিন দেখি, দুজনে ফিসফিস করে কিসব আলোচনা করছে।

বেশ অবাক হলাম। সর্বক্ষণ তো গাঁক গাঁক করে কথা বলে কানের পোকা বার করে!

কিন্তু কিছু বললাম না, পোষাচ্ছিল না সেদিন।

শুনলাম, ব্যাঙ্গমী বলছে ব্যাঙ্গমাকে – “দেখলি, কি বললাম! মানতে চাইছিলিস না।”
“ঠিকই বলেছিস ব্যাঙ্গমী”

ব্যাঙ্গমী – “কিরে ছেলে, মন খারাপ?”

“নাহ”

“আমরা কিন্তু জানি তোর কেন মন খারাপ”

মনে মনে ভাবলাম, তা জানবে না কেন, সারাক্ষণ তো হাঁড়ির খবর শুনছ!

“জানিস তো জিগ্যেস করছিস কেন? ন্যাকামো সহ্য হচ্ছে না মাইরি”

“আহা, রেগে যাচ্ছিস কেন?”

সত্যি তো, ওদের কি দোষ।

“শোন, মন খারাপ করিস না, যা করবি ভেবেছিস, ঠিকই করেছিস। তোর তো চেষ্টার কমতি ছিল না।“

আবার জ্ঞান!! পারা যায় না আর!

এভাবেই চলছিল ভাল-মন্দ মিশিয়ে।

দুজনের কথোপকথন শুনে কতকিছু মনে পড়ত, কখনো হাসি পেত, কখনো বা মনটা ভারী হয়ে আসত।

কিন্তু কাল রাত থেকে খুব জালাচ্ছে দুজনে, জানিনা কেন!

আজ সকালেও ওই নিয়েই খুব চিন্তান্বিত হয়ে দুজনে কথোপকথন চালাচ্ছিল।

ব্যাঙ্গমী - “হ্যাঁরে, ছেলেটা কাল রাত থেকে ফিরল না তো বাড়ী! এরকম তো করেনা, কোথাও গেলে বলে যায়।”

“ঠিকই বলেছিস।
মাঝখান থেকে আরেকটা কে এল বটে, ওরকমই দেখতে, কিন্তু এত সেই ছেলেটা নয়!”

আপনিই বলুন, মটকা গরম হবে না সাতসকালে!!

Saturday, April 18, 2020

অরুণোদয়

অরুণ অনেকদিন পর ভোরবেলা দৌড়তে গেছিলো।
এখন তো রাস্তাঘাট ফাঁকাই থাকে। ইতিউতি লোকজন বাঁচিয়ে, কিলো ছয়েক দৌড়ে ফিরে অরুণ সবে দম নিচ্ছিলো বাড়ির গলির সামনে দাঁড়িয়ে।

এমনি সময়ে পাড়ার কুকুরগুলো ল্যাজ নাড়িয়ে ছুটে এলো।

না, অরুণের দিকে নয়।

রাস্তার ওপারে, কিছুটা দুরে বসে থাকা এক মহিলার দিকে।

অবিন্যস্ত চুল, অনেকদিনের না ধোয়া। গায়ে একটা ময়লা কালচে-সবজেটে জামা, আর তার উপর আরো কালচে একটা অ্যাপ্রণ জাতীয় জিনিস। পাশে একটা প্লাস্টিকের লাঠি।

মহিলা একটুক্ষণ তাকিয়ে দেখে, জামা আর অ্যাপ্রণের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বার করল একটা আধখাওয়া বিস্কুটের প্যাকেট।
কুকুরদের লাঙ্গুলসঞ্চালন আরো জোর হল।
ওদের কিসব বলতে বলতে মহিলা বিস্কুটগুলো ছড়িয়ে দিলো।

অরুণ থমকে দাঁড়িয়ে রইল।

সে নিজেও অনেকবার অনেককে খাবার কিনে দিয়েছে। কিন্তু খিদের মুখে, নিজের খাবার, অন্যকে দিয়ে দেওয়া...

ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ পরে অরুণ ফিরে এলো ওই জায়গাটায়। হাতের থলিতে একটা জলের বোতল, আর একটা নতুন না-খোলা খেজুরের প্যাকেট।

কই, মহিলা গেলেন কোথায়?

বুকটা ধড়াস করে উঠল অরুণের।
দশ মিনিটও হয়নি অরুণ গেছে!

এদিক-ওদিক তাকাতেই - নাহ, হাসি ফুটে উঠলো অরুণের মুখে।
মহিকা খানিক জায়গা বদল করেছেন - মিটার কুড়ি যাবার পরেই আবার বসে পড়েছেন।

এগিয়ে গেলো অরুণ, হাতের জিনিস নিয়ে, গিয়ে পাশে বসল।

মহিলার মুখে এক অনাবিল হাসি।

জলটা আর খেজুরের প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো অরুণ।
সম্ভবত তেষ্টা পেয়েছিলো খুবই, তবু দুঢোক জল খেলেন।
হয়ত বাঁচিয়ে রাখলেন কারুর জন্যে!

ভাষার সমস্যা, তবু দুটো কথাবার্তার পর, ভদ্রমহিলা খুব সঙ্কোচ ভরে জিগ্যেস করলেন, একটু খাবার হবে?

ঝলমলে সকালটাও যেন কেমন বিষাদময়!

হাতের খেজুরটা দেখাতে, খোলার চেষ্টা করলেন। দুর্বল হাত ব্যর্থ হচ্ছিলো বারবার।
অরুণ হাত বাড়িয়ে প্যাকেট টা নিয়ে খুলে, এগিয়ে দিলো আবার।

মহিলা মায়াময় চোখে তাকিয়ে খেজুরের প্যাকেট টা একটু বাড়িয়ে বললেন, তুমি নাও!

অরুণ ফিরছিলো, কিন্তু চারিদিক ভীষণ ঝাপসা হয়ে এসেছিলো।

দুটো খেজুরের প্যাকেটের মধ্যে ও শেষ পর্যন্ত না-খোলা প্যাকেটটাই নিয়ে এসেছিলো - তবুও, নিজেকে ধিক্কার জানানোর ভাষা পাচ্ছিলো না সে।

তবু, প্রায়শ্চিত্তের সুযোগ রইল।
কাল আরেকবার আসতে বলেছে ওনাকে, সকালে।

ঝাপসা কুয়াশা কেটে সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে।

অরুণের মুখে হাসি ফুটে উঠল।

Wednesday, February 26, 2020

The Fourth

Gayam started running, leaving his pot of water made out of gourde skin, rolling at the river bank.

He had already noticed the footsteps on the other side of the river bank - the grey grasses on the slightly wet soil messed up with prominent footsteps!

How many, he had tried to count. Five, seven, twenty?
Gayam didn’t learn to count beyond that! May be his father could!

That's when he had started running towards their home, worried by the thought of his father.

He ran quite fast, although awkwardly, trying to ignore the discomfort due to his permanently deformed set of legs. Ultimately, he is one of the fastest runner among the other few runners of his clan. Many of them are deformed further, by birth!

Their were already a small crowd in front of their cave when he reached there, panting.
And the small crowd grew larger fast, and went berserk when Gayam could tell them what he saw in that morning.

The entire clan started preparing.

The ones who are completely handicapped and incapable of doing anything, were moved back to the rear end of the cave.
Another group of slightly more abled men, lacking one or the other set of limbs, and bogged down by diseases, formed the guard at the entry of the cave.
They will be the supply line for the frontmost row of men.

The rest, around seventeen of them, limped forward towards the range of trees.

Even the trees looked hagged, completely deformed!

The seventeen men had stones and sticks, two of them carrying bow and arrow too. They scrambled atop the trees. And started waiting.

It was a dark night. And eerily quiet.
The sounds of the wild animals and the insects have long been wiped out from the face of earth!

The enemy were spotted at the break of the dawn.
A group of around fourty people, carrying stones and sticks as well, were coming painfully slowly, dragging their deformed limbs, towards the awaiting group in the trees.

Gayam's group also got ready.

After eighty years of the devastating nuclear destructions of the third world war, the last surviving seventy-one people on earth - deformed and mutilated, faced each other in the fourth world war, to kill!



- Translated from the short story "চতুর্থ", written by Somnath Chattopadhya, published in his book "আণবিক".

For those who want the original story, here is the link for the required details.