Sunday, January 13, 2019

ফোনবুক

সেন্টার টেবিলের উপর রাখা ফোনটার দিকে আরেকবার তাকালেন অমিয়বাবু।

বারান্দা থেকে সকালের হালকা আলো এসে পড়েছে ফোনটার উপর।

গত সপ্তাহ অবধি বলেছে নম্বরটা সুইচড অফ।

অমিয়বাবুর কলেজের বন্ধু, তমালের।

এর আগে শেষ এরকম হয়েছিল স্কুলের বন্ধু অসীমের ক্ষেত্রে, প্রায় মাসখানেক অপেক্ষা করতে হয়েছিল!

আর ভাস্করের জন্যে, দিন দশেক। ভাস্করের ছেলে বাপের মতই নিয়মনিষ্ঠ, কাজ ফেলে রাখত না একদম।

ফোনটা হাতে তুলে নিলেন অমিয়বাবু। 

ডায়াল করলেন আরেকবার, গত সপ্তাহে করা তমালের নম্বর।

...

অসীমের ক্যান্সার হয়েছিল, ছ'বছর আগে, লাস্ট স্টেজ। ভাস্করের অফিস ক্যাব, বম্বে রোডে ট্রাকের সাথে হেড-অন কলিশন করে, দু'বছর হল।
...

সেকেন্ড দশেক পরে হাসি ফুটে উঠল অমিয়বাবুর ঠোঁটের কোণে। 

ফোনের থেকে শোনা যাচ্ছে - "এই নম্বরের কোনো অস্তিত্ব নেই..."।

ফোনটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড ধরে রাখলেন চোখের সামনে। তারপর, কয়েকটা ট্যাপ করে মুছে দিলেন বন্ধুর নম্বর।

ফোনের স্ক্রীনে কালো অক্ষরে ফুটে উঠল কয়েকটা শব্দ - " ইয়োর ফোনবুক ইজ নাউ এম্পটি"।

6 comments:

  1. Amar vision Bhalo legeche.but bhaskor r cheler significance bujhlam na.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওটা মুখ্য চরিত্র কিছু না, জাস্ট মৃত্যুর একটা পটভূমিকা তৈরীর জন্যে। বুঝিয়ে দেবো। 🙂

      Delete
  2. অনেকদিন পর এল, কিন্তু জবরদস্ত একটি অনুগল্প নিয়ে এল।

    ReplyDelete
  3. অনেক ভেবেচিন্তে লিখতে বসেছি।
    প্রথমে ভাবলুম বেশ জবরদস্ত একখানা কমেন্ট ছাড়ব যেটা আকারে প্রায় এই অনুগল্পের সমানই হয়ে যাবে।
    কিন্তু পরে ভেবে দেখলুম, সেই প্রশংসার কথা গুলো লিখে লাভ কি যে গুলো সবাই লিখবে। গপ্পটা আমি যখন পড়লুম, সে সময়টা ভারি বিদ্ঘুটে। জানুইয়ারির শীতের রবিবারের ভোর চারটে বেজে কুড়ি মিনিট।
    বাইরে বারো ডিগ্রি আর ঘুটঘুটে অন্ধকাত। এই বিদ্ঘুটে সময় কম্বল মুড়ি দিয়ে না ঘুমিয়ে আমি কেন খামোখা মোবাইল ফোন দেখতে গেলুম, আর কেনই বা সেখানে আসা একতা মেসেজের সুত্র ধরে গপ্পখানা পড়তে গেলুম, সে কিস্যা উহ্যই থাক, গপ্পে আসি।

    প্রথমে ভাবলুম লুপ্ত প্রেম। ইশকুল বা কলেজের। দু লাইনে সে সম্ভাবনা হাওয়া। ভাবলুম তাহলে কি ফ্যান্টাসি? পরের লাইনে তমালের ফোএর কথা আসতেই সে খোলস ও বদল হলো। অসীম আর ভাস্কর এসে আরো দুটো খোলস বদল করে গেল। এ যেন এক খানা আস্ত পেঁয়াজ। একতা করে স্তর খুলছে, আর আরো ঝাঁঝ বেরুচ্ছে।
    করতে করে, শেষে নম্বরের অস্তিত্বই নেই হয়ে গেল যখন। তখন সেই সম্ভাবনাটা উদয় হলো, "তবে কি? তবে কি???"

    সেইটাই অনুগল্পে হয়, যেটা কেউ ভাবে না।
    সাব্বাস। একদম একটা অনু পরিমান পরিসরে এক খানা উপন্যাস ঢুকিয়ে ফেলেছ। সকাল থেকে সারা দিন ভাবলুম প্লট নিয়ে। এ থেকে কত কিছুই হতে পারে। এমন কি সিনেমা পর্যন্ত।

    চমকের একটা সীমা থাকে। এ গল্প তাকেও অতিক্রম করেছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. লেখা হল স্যান্ডউইচের মত, আগে আর পরে আলসেমির মধ্যে একস্তর গা ঝাড়া দেওয়া সময়।

      তোমার গাইডেন্স আর অফুরন্ত উৎসাহই আমার স্যান্ডউইচ বানানো শুরু করার প্রধাণ কারণ, তার আগে শুধু শুকনো পাঁউরুটি দিয়েই চলছিল।

      আর, তোমার মত পাঠক, আর এইরকম একেকটা কমেন্ট, আমাকে দিয়ে পরের স্যান্ডউইচটা বানায়।

      ভাগ্যিস! নইলে সেই শুকনো পাঁউরুটিই...

      Delete