Thursday, May 21, 2015

তারপর

দিগন্তব্যাপী প্রান্তর
অসীম আকাশ
চারিদিকে বয়ে যাওয়া
দূর্বার বাতাস

ডাল মেলে
একটু হেলে
দাঁড়িয়ে থাকে
ছোট এক গাছ

এক ছোট, সাদা পায়রা
উড়ে যায়, ভেসে যায়
খেলে যায়, কখনওবা
বসে যায়, গাছের ডালে

গাছের পাতাগুলো
ঝিরঝির করে দুলে যায়

অশান্ত ঝড়ে
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে
সাদা পায়রা
এসে বসে ডালে
পাতাগুলো সস্নেহে
ঢেকে রাখে

দুর্যোগের রাতে
শনশনে হাওয়া
শ্বাপদসংকুল এ জগৎে
গাছের ডালে বসে
দিন কেটে যাওয়া

এভাবেই চলত
কিন্তু আগাছাগুলো বলত
কেন রে পায়রা
গাছের ডালে বসবি?
ও ডাল তো খারাপ
আয়, আমাদের মাঝে রইবি

তিরতির করে
কেঁপে যাওয়া গাছ
যেন বলে
যা পায়রা, উড়ে যা

আস্তে আস্তে
শুকিয়ে যাওয়া গাছ

তবু মেলে রাখে ডাল
যদি কোনদিন
এসে বসে
সাদা পায়রা
যদি, আবার হয় সকাল

Monday, May 11, 2015

একফালি রোদ

“আজকাল এত যে কি ভাবো তুমি, দাদা!! সেই কখন থেকে বইটা মুখের সামনে খুলে বসে আছো, পাতাটা পর্যন্ত উল্টোওনি।”

দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বইটা ভাঁজ করে পাশের ছোট টেবিলটায় রাখলাম। আর পড়া হবে না এমনিতেও, ঝুমুর বকতে শুরু করলে ক্ষান্তি দেবে না।

ঝুমুর আমার ঘরের বারান্দায় রাখা অনেকগুলো গাছের মধ্যে একটা ছোট বনসাই ঝাউ গাছ। বছর চারেক হবে ওকে লাগিয়েছি এখানে। গাছের সঙ্গে কথা বলাটা হয়ত ভীমরতিই হবে, তবে বয়েসও তো হয়েছে। এই সামনের মাসে ৪৭ হবে।
তবে, আজকাল আর অত ভাবিনা, ভীমরতি হলেই বা আর কি করা যাবে।

“না ভেবে আর উপায় কি, নাহলে তো তুই বকে বকে আমার কানের পোকা বার করে দিবি”।

“ওওও, আমি তো শুধু বকি, তাই না!! এখন তো বলবেই!”

ঝুমুরের হাবভাব অনেকটা ছোট বোনের মত, বেশ বকাবকি করে, আর মাঝে মাঝে এরকম মান-অভিমান দেখায়।

কয়েক সেকেন্ডের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম বোধহয়। ঝুমুরের কথায় সম্বিত ফিরল।

“দাদা, মিচকি মিচকি হাসছো কেন বলতো?!”

নিজেই খেয়াল করিনি কখন যেন ঠোঁটের কোনে অজান্তেই হাসি লেগে গেছিল।

ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললাম, “কিছু না রে, এমনি”।

ঝুমুরের বয়েস বছর সাড়ে চারেক হলে কি হবে, সে মহা পাকা। গাছেদের ক্ষেত্রে সাড়ে চার খুবই অল্প বয়েস হবার কথা। কে জানে, এঁচোড় পাকাই হবে বোধহয়।

একটা ব্যাঁকা হাসি হেসে ঝুমুর বলল – “কিছু না বললেই হল!! আমি সব বুঝি।
বলো না, কারুর কথা মনে পড়ল বুঝি?”

মনে পড়া!!

নিজের মনেই হাসলাম। মনে তো তখনই পড়ার প্রশ্ন আসে যখন লোকে ভুলে যায়।

কিন্তু ঝুমুরকে এত কিছু বুঝিয়ে লাভ নেই। আজ বোধহয়, কেন জানিনা, ঝুমুরের ওই ছোট্ট কথাটায় মনটা অনেকদুর চলে গেছিল।

তাই বললাম, “হ্যাঁ, তা পড়ল। অনেকদিন আগে, আমার এক বন্ধু ছিল। তার কথা ভেবে হাসলাম।”

“তাই?? তা সে কিরকম বন্ধু ছিল গো? খুব কাছের বন্ধু?”

কঠিন প্রশ্ন।

মানে, ঠিক কঠিন নয়, কিন্তু সমস্যাটা এই যে উত্তরটা চট করে কাউকে বোঝানো খব মুশকিল, তাই কঠিন।

বললাম, “কিরকম বন্ধু, কি করে বোঝাই বলত? বোঝালে কি তুই বুঝবি?”

বনসাই ঝাউগাছটা দেখলাম একটু ডানদিকে হেলে গেল সামান্য। ঝুমুর বোধহয় গালে হাত দিয়ে বসল, ইন্টারেস্ট পেয়েছে নিশ্চই।
নিজের মনেই একটু হেসে আবার বললাম।

“তোর এই রাগ করা দেখে মনে পড়ল, সেও এরকম কথায় কথায় খুব রাগ করত আর ঝগড়া করত। বাচ্চাদের মতই।”

“ওয়াও, খুব ভালো বন্ধু তো গো দাদা!!?” – ঝুমুরকে খুব উত্তেজিত দেখালো।

“ভালো কি মন্দ বলতে পারব না, তবে মাথার সব চুল তুলে দিয়েছিল বটে আমার। প্রচন্ড রেগে যেত যদি তার একটুও মনে হত যে আমি কাউকে তার থেকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছি। একদম ক্ষেপি।”

কেমন যেন মনে হল ঝুমুর জিভ কাটলো।

আকাশটা সকাল থেকেই মেঘলা। চারিদিকে কেমন যেন গুমোট ভাব। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালাম। দুটো কাকা উড়ে গেল কা কা করতে করতে। রাস্তার ধারের কৃষ্ণচুড়া গাছটাতে অনেক ফুল হয়েছে, ঠিক যেন আগুন লেগেছে সমস্ত গাছটাতে।
ঝির ঝির করে কেঁপে উঠল পাতাগুলো, মৃদুমন্দ হাওয়া বইছে, অনেকদিন পরে।

“কতদিন আগের কথা গো দাদা?”

চটকা ভাঙ্গল ঝুমুরের কথায়। বেচারা অনেক্ষণ চুপ করে ছিল, ভাবছিল আমি কিছু বলব, কিন্তু তারপর  আর ধৈর্য ধরতে পারেনি বোধহয়।

কতদিন আগে?
সময়ের হিসেব কি করে করি, যেখানে সময় থমকে আছে আজও!

ঝুমুরের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তা হবে, আমি তখন ৩১-৩২ হব”।

ঝুমুর খানিক্ষণ চুপ করে থেকে জিগ্যেস করল – “তোমরা খুব গল্প করতে নিশ্চয়ই?”

“হুম, তা তো করতাম”

“কি গল্প গো, বল না”

“গল্প আর কি!! যেরকম সবাই করে সেরকম গল্প”

“দূর বাবা, এ তো আচ্ছা মুশকিল হল, গলায় কি ব্যাঙ ঢুকেছে নাকি!!” – ঝুমুরকে বেশ রাগান্বিত মনে হল।

আমি হেসে বললাম, “আচ্ছা ঝুমুর, সে গল্প কি আর একটা রে, কি করে বলি বলতো? সে অনেক গল্প, তার না আছে কোনো মাথা, না আছে কোনো মুন্ডু। বকতে বকতে যে কখন সময় পেরিয়ে যেত টেরই পেতাম না। কখনও কাজের গল্প, কখনও বইয়ের, কখনও গানের, কখনও খাবারের, আবার কখনও আমার গল্প, তার গল্প, আমাদের গল্প, বৃষ্টির গল্প, রোদ্দুরের গল্প, সবুজ উপত্যকা বা রুক্ষ মরুভুমির গল্প।”

...
...

কখন হালকা বৃষ্টি আরম্ভ হয়েছিল খেয়ালই করিনি। গালে হালকা জলের ছিটে লাগতে বুঝলাম। ঝুমুরের পাতাগুলোও ভিজে গ্যাছে একটু, টুপটাপ করে জল পড়ছিল ওর পাতাগুলো থেকে।

অনেক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলাম। কতক্ষণ সময় কেটে গেছিল তার খেয়াল ছিল না। ঝুমুরও কোন কথা বলেনি এতক্ষণ। কি ভাবছিল কে জানে!

“আসলে, আমি বোধহয় ভালো বন্ধু ছিলাম না।”

“কেন?” – ঝুমুরকে একটু গম্ভীর লাগল।

“ভালো বন্ধু তো তার বন্ধুকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে, দ্বিধায় ফেলে পেছনে টেনে ধরে না”

“কেন, তুমি কি পেছনে টেনে ধরেছিলে?”

“সেটা ঠিক জানি না, তবে দ্বিধায় ফেলেছিলাম এটা নিয়ে তো কোন সন্দেহ নেই”

ঝুমুর আর কিছু প্রশ্ন করল না এটার পর। এত কঠিন কথাবার্তা শুনে ঘেঁটে গিয়েছিল বোধহয়।

আমিও ভাবছিলাম, কেন তৈরি হয়েছিল দ্বিধা।

এ পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ যখন অন্যদের সঙ্গে মেশে, কথা বলে, তাদের মধ্যে অনেকগুলো স্তর থাকে। আসল মানুষটা, যে সবসময় একটা সাদাকালো চরিত্র, সে কখনই বাইরে আসে না। তবে, কখনও কখনও, খুব কম ক্ষেত্রে, কখনও কেউ কেউ পেয়ে যায় এমন কাউকে, যার সামনে সেই আসল মানুষটা বেরিয়ে আসতে পারে নির্দ্বিধায়। আর তখন, সেই দুটো মানুষ জুড়ে যায় এমন একটা মনের স্তরে, যেটা অবিচ্ছেদ্য, আর চিরকালীন।
কিন্তু এই স্তর তো শুধু সেই দুটো মানুষের জন্যে, আর কেউ বোঝে না তার অস্তিত্ব। আর, সত্যিই তো, পৃথিবীটা তো আর শুধু দুজন মানুষকে নিয়ে চলে না।

“কি হয়েছিল, তারপর?”

“কি আবার হবে? হবার আছেটা কি এর মধ্যে?”

“নেকামো কোরো না!! আমি জিগ্যেস করছি কি হল তোমার বন্ধুর, তারপর?”

“শোন ঝুমুর, জীবনে এগিয়ে যেতে গেলে পুরোনো জিনিস অনেকসময় ফেলে দিতে হয়, বোঝা কমাতে হয়, কেটে ফেলতে হয় পুরোনো সম্পর্ক, যা কাউকে পিছনে টেনে ধরে।”

“বাহ, ছেড়ে চলে গেল?!”

“আহ ঝুমুর, বাজে কথা বলিসনা, এর মধ্যে ছেড়ে যাবার কি আছে!! যেটা বুঝিসনা সেটা নিয়ে কথা বলিস কেন?”

একটু বেশীই ঝাঁঝিয়ে বলে ফেলেছিলাম কথাটা। খারাপ লাগল ঝুমুরকে চুপ করে থাকতে দেখে।

তাই একটু পরে বললাম, “আচ্ছা চল, আমি আবার একটু বইটা পড়ি, বুঝলি?”

...
...

“থাকো তো একা, সেরকম কাছের বলতে কেউ নেই তোমার, কেউ কিছু পাঠায়ওনা তোমাকে, ওই মোটা কালো ফ্রেমের চশমাপরা দাদু শুধু মাঝে মাঝে ইমেল করে তোমাকে, আর ওই দুটো ছোঁড়াছুঁড়ি, ওই কি পিং না টিং কি বলে – সেসব করে, তাহলে, প্রতি বছর ১৩ ই জুন নিয়ম করে লেটারবক্সের চাবি খুলে কি দেখো?”

একটু হাসলাম, কিন্তু আর বললাম না ঝুমুরকে, যে, ওই একটাই এক্সপেক্টেশন আজও রয়ে গেছে। এটা একমাত্র একজন ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

মুখের উপর একটা হালকা রোদ এসে পড়ল। মেঘ সরে গিয়ে রোদ উঠেছে। আর গুমোট নেই চারিদিকে।
পাশের বাড়ী থেকে কেউ একটা গান চালিয়েছে। জন ডেনভার গাইছেন...

“Sunshine, on my shoulders makes me happy
Sunshine, in my eyes can make me cry
Sunshine, on the water look so lovely
Sunshine, almost always makes me high”

Saturday, May 9, 2015

হয়ত কোনোদিন


প্রস্তুতি

আপনি যদি একটু চালাক-চতুর গোছের লোক হন, তাহলে লক্ষ্য করে থাকবেন, যে, কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে, বেড়াতে যাওয়াটার থেকে, বেড়াতে যাব-যাব – এই আদেখলাপনা ভাবটা বেশী উত্তেজনাপূর্ব। অনেকটা, ওই চুমু-টুমু খাওয়ার আগের মূহুর্তগুলোর মত, যেটা আসল ব্যাপারটার থেকে সাধারণত বেশী ইয়ে হয় আরকি।

এই, দেখেছেন তো, কোথা থেকে কোথায় চলে গেলাম!! এই হয়েছে আজকাল, মধ্য-বয়েসের ইয়ের দোষ। একটু মার্জনা করে নেবেন, কারণ উপমাটা না দিলে সব পাঠক না বুঝতে পারতে পারেন, কারণ সবাই তো আর জীবনে বেড়াতে যাননি, তবে ইয়েটা করেছেন।

যাই হোক, আবার বিষয়ে ফিরি একটু।
তো, এইরকম বেড়াতে যাব যাব ব্যাপারটা অনেকদিন থেকেই চলছিল। বেশ গোটা-দশেক লোকজনও যোগাড় হয়ে গেছিল। ট্রেনের টিকেটটা মাঝে মাঝেই দেখতাম ওয়েবসাইট খুলে (এখন মনে হচ্ছে, কি অসহ্য নেকামো মাইরি)। যত দিন এগিয়ে আসতে লাগল, অফিসের কাজ ডকে তুলে, ওখানে গিয়ে কি কি করা হবে তার বেশ কিছু হাস্যকর (তখন মনে হয়নি যদিও) প্ল্যানও বানিয়ে ফেলা হল। উৎসাহ যখন চরমে উঠবে উঠবে করছে, তখন গোটা চারেক উইকেট পড়ে গেল ঝপ করে। কিন্তু তখন আর কিছু করার নেই, ওই “একবার ম্যায় কমিটমেন্ট কর দিয়া তো ম্যায় আপনে আপকা ভি নেহি শুনতা” টাইপের রোখ চেপেছে তখন।

এই করতে করতেই, অবশেষে এলো ৩০ শে এপ্রিল। ঝ্যাকাস – আজ জয় মা কালী পাঁঠাবলি -  শুভযাত্রা। ক্যাওড়াতলার হরতাল আর পাহাড়ের কম্পনসহ করতাল – সব উপেক্ষা করে, আমরা পৌঁছে গেলাম হাওড়া স্টেশন। আলাপ-পরিচয়ের পালা সেরে, সেলফি-টেলফি তুলে আর এককাঁড়ি খাবার-দাবার কিনে-টিনে, সে একসা কান্ড।
এই খাবার কেনার পেছনে যে কারণটা ছিল, সেটা না বলে প্রসঙ্গাতরে যাওয়াটা অন্যায় হবে একটু। আমাদের মধ্যে একজন যিনি মহিলা ছিলেন, তিনি বেশ দায়ীত্ব সহকারে এইসব গিন্নিবান্নী টাইপের ব্যাপারগুলো সামলাচ্ছিলেন। তো, তিনি বললেন, চল কিছু খাবার-দাবার নিয়ে নেওয়া যাক। উত্তম প্রস্তাব। গেলুম কিনতে, বেশ কেনাও হল। তারপর আমি বললুম, একটা বান-পাঁউরুটি দাও তো দেখি, খাই। আমার আবার খাই-খাই-টা চিরকালই একটু বেশী। তা, হাত বাড়ালুম বান-পাঁউরুটির দিকে, একটিকে হস্তগত করতে।
“একদঅঅঅম না” – হুস করে খাবারের প্যাকেটটা পিছলে গ্যালো হাতের গোড়া থেকে।
যাচ্চলে!!
“এগুলো সব এমার্জেন্সীর জন্যে নেওয়া” – বললেন তিনি।
বেশ ঘাবড়ে গেলাম। এমার্জেন্সী শুনলেই আমার কেমন যেন হয়, কারণ আমি সবকিছু বেশ আরাম করে সময় নিয়ে করতেই পছন্দ করি, যাকে আপনারা ল্যাদ বললেও আমি আপত্তি করব না। তাই ভয়ে ভয়ে জিগ্যেস করেই ফেললাম, “কি এমার্জেন্সী?”।
“যদি ওখানে ভুমিকম্প হয়, আর তাতে ধ্বস নেমে আমরা আটকা পড়ে যাই, তখন এগুলোই তো কাজে লাগবে”।
আমি ৩-৪ সেকেন্ড পরে আমার হাঁ মুখটা বন্ধ করে নিলাম। একবার ভাবলাম বলি যে, ওরকম পরিস্থিতি হলে ওই খাবার-দাবারগুলো সঙ্গে নেবার কথা মনে থাকবে কিনা সে বিষয়ে আমার যারপরনাই সন্দেহ আছে, তখন চাচা আপন প্রাণ বাঁচা নীতিটাই একমাত্র মনে থাকতে পারে। কিন্তু যথাসময়ে সুবুদ্ধির উদ্ভব হওয়াতে চেপে গেলুম।

সুতরাং, অবশেষে, আমরা পঞ্চপান্ডব, চেপে বসলাম ট্রেনে।
দিনের ট্রেন, সুতরাং বসে বসেই যাত্রা। প্রকৃতির লীলা আর (অ)রাজনীতির বিলা – এই দুয়ের  কৃপায় ট্রেনটা বিলকুল ফাঁকা ছিল, সুতরাং আমাদের বৈঠকি বসাতে বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। তাতে ট্রেনে বাকি যে গুটিকয়েক যাত্রী ছিলেন, তাদের কি এসে-গেল সেটা দেখার মতন কোনো অশুভবুদ্ধি আমাদের কারুর হয়নি।

যাত্রা...

এই দেখেছেন, বকবক করতে করতে বলাই হয়নি যে যাচ্ছিটা কোথায়! বেশী কথা বলে ফেলি আজকাল। পাঠকগণ, ধৈর্য রাখার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ।

আমরা যাচ্ছি যে জায়গাতে, তার নাম “ভার্সে” বা “বার্সে”। ভাবছেন তো, সে কোন চুলোয়? আমিও ভেবেছিলাম প্রথমবার শোনার পর। একটু অল্পপরিচিত জায়গা এই ভার্সে। সিকিমের একদম পশ্চিম প্রান্তে, কাঞ্চনজঙ্ঘার বেশ কাছাকাছি একটা ছোট্ট খোলা জায়গা, যেখানে জনবসতি বলতে কিছুই নেই। আছে শুধু দুটো ট্রেকার্স হাট।
শুনে যদি উৎসাহিত হন, খুব ভালো। যদি ভাবেন, যাওয়া যাক পরবর্তী ছুটিতে, এক মিনিট দাঁড়ান।
ভার্সে যাবার আগে দুটো জিনিস আপনার জেনে নেওয়াটা খুব জরুরী বলেই আমার মনে হয়।
এক - আপনি যদি হাঁটতে না পছন্দ করেন, তাহলে ভার্সে আপনার জন্যে নয়। এটা ভাববেন না যে আমি শুধু পাহাড়ী রাস্তায় হাঁটার কথা বলছি। আমি হাঁটা জিনিসটার কথা বলছি। মানে, ধরুন, আপনার মন বেশ খারাপ, কি করবেন ভাবছেন, একটু পরে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে, একটু ইতিউতি হেঁটে বেড়ালেন আপনমনে, মনটা ভালো হয়ে গেল। বা, ধরুন, আপনার মন আজ খুব খুশি খুশি, টুক করে বেরিয়ে পড়লেন, গঙ্গার ঘাট অবধি হাঁটলেন, দুটো সিঙ্গাড়া-জিলিপি খেলেন, ব্যাস বাড়ী চলে এলেন। এই জিনিস যদি আপনার পছন্দের জিনিস হয়, কি করলেন সেটা বড় কথা নয়, হাঁটলেন, সেটা বড় কথা, তাহলে আপনি ভার্সে যান। বরং, যাওয়া উচিৎ।
দুই – আপনি যদি কোথাও বেরিয়ে মনে করেন যে কখন পৌঁছব কখন পৌঁছব, আর গন্তব্য আসতে দেরি হলে বিরক্ত হন, ভার্সে তাহলে আপনার জন্যে নয়। আর, আপনার কাছে যদি পথ চলাটাই হয় আসল আনন্দের জায়গা, তাহলে ভার্সে আপনার জন্যে।

সুতরাং, যারা এতকিছু আজেবাজে বিরক্তিকর কথা শোনার পরও ভার্সে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্যে বলি, আপনাকে পৌঁছতে হবে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি। কলকাতা থেকে অনেকগুলো ট্রেন যায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। যেকোনোটায় চড়ে বসুন। সবথেকে ভালো হয় হাওড়া থেকে রাতের ট্রেনগুলো ধরলে, যেগুলো আপনাকে একদম সকাল সকাল পৌঁছে দেবে নিউ জলপাইগুড়িতে। কারণ, এরপর আপনাকে বেরিয়ে পড়তে হবে বেশ লম্বা একটা সফরে। আপনাকে যেতে হবে “হিলে” নামক একটি ছোট্ট জনপদে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বেরিয়ে, সেবকের হয়ে, তিস্তার পাশ দিয়ে আপনার যাত্রা চলবে। পথে পড়বে “করোনেশন ব্রিজ”, যেটা আপনি পেরোবেন না, বরং যাবেন ব্রীজের পাশ দিয়ে যে রাস্তা চলে গ্যাছে “মেল্লি”-র দিকে, সেই রাস্তা ধরে। এই “মেল্লি” হল সিকিমে ঢোকার একটা প্রবেশপথ। দক্ষিণ সিকিম বা পশ্চিম সিকিমের যেকোনো জায়গায় যেতে গেলে “মেল্লি” হয়ে যাওয়াটাই সুবিবেচনার কাজ হবে। “মেল্লি”-র পর “হিলে” যাবার পথে বড় জনপদ বলতে আর একটিই জায়গা, “জোড়থাং”। পথের শেষ এটিএম, শেষ বড় দোকানপাট, শেষ জনপদ। আপনি যদি একটু পানভোজনপ্রিয় মানুষ হন, তাহলে সেইসব সরঞ্জাম আপনি এই “জোড়থাং” থেকেই সংগ্রহ করে ফেলুন, সিকিম এমনিতেই রঙ্গীন পানীয়ের জন্যে আদর্শ জায়গা।

উফ, এতক্ষণ ধরে বাপু এই শুষ্কং-কাষ্ঠং গুচ্ছগুচ্ছ ইনফরমেশন দিতে দিতে মুখ ব্যাথা, থুড়ি, হাত ব্যাথা হয়ে গেল। এবার আবার বরং গল্পে ফিরি।

আমাদের এই ট্যুরটা ছিল একটা প্যাকেজ ট্যুর। আমাদের পরিচিত অনেকের রেফারেন্সে এক ভদ্রলোকের যোগাযোগ পাওয়া গেল, যিনি এই ট্যুরটা করাবেন। নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছনো থেকে আবার সেখানে ফেরৎ আসা অবধি আমরা নিজেদেরকে তার হাতে সমর্পণ করে দেব, এরকমই একটা চুক্তি হল। ধরা
যাক, ভদ্রলোকের নাম, গড়গড়ি। আমরা তাকে গড়গড়ি দা বলেই ডাকব।

যখন নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছলাম, এই গড়গড়ি দা-র সেখানে অপেক্ষা করার কথা।
কেন জানি না, রেল স্টেশন চত্বরের অত লোকজনের মধ্যে গড়গড়ি দা-কে প্রথমবার চিনে নিতে কোনো অসুবিধা হল না।
মাঝবয়েসী, বাঙালীর অনুপাতে লম্বাই বলা যেতে পারে, ছিমছাম চেহারা, একটা মারুতি ওমনি ভ্যানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ভদ্রলোক। ইতস্তত পায়ে কাছাকাছি যেতে, হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। চোখদুটো সাধারণের অনুপাতে একটু বড়ই, আর তার মধ্যে বুদ্ধিমত্তা আর রসবোধের ছাপ স্পষ্ট। খেয়াল করিনি, আমার হাসিটা আমার অজান্তেই মুখে চলে এসেছিল।

ঝটিতি আলাপ-পরিচয় সেরে, আমরা চটপট রওনা দিলাম হোটেলের উদ্দেশ্যে। শিলিগুড়ি শহরে। সেই রাতটা আমাদের শিলিগুড়িতে কাটিয়ে পরদিন ভোরবেলা গন্তব্যের দিকে রওনা দেবার কথা।

রাতটা বেশ নির্বিঘ্নে কেটে গেল। অনেকদিন পর, বাড়ির বাইরে, বাড়ির চেনা বিছানা ছেড়ে, একটা অন্য জায়গায়, অন্য বিছানায়, অন্য দুজন সহযাত্রীর সাথে হোটেলের ঘরে, এটার একটা আলাদা রোমাঞ্চ আছে – বেশী কাঠখোট্টা হলে যেটা আপনি বুঝবেন না।
পরেরদিন, ভোরভোর তৈরি হয়ে হোটেলের বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম। শিলিগুড়ি শহরটা আমার চেনা শহর নয়, তবে দেখা বটে। সেদিন সকালে যখন আরেকবার দেখলাম শহরটাকে, আরেকটু যেন চিনলাম। একটা আস্তে আস্তে জেগে উঠতে থাকা শহর, রাস্তায় ইতিউতি রিক্সার চলাচল, সকালের তাজা সবজি নিয়ে একটা হাল্কা মেঠো গন্ধ ছড়িয়ে বাজারের দিকে চলে যাওয়া ভ্যান-রিক্সা, মর্নিং-ওয়াকে বেরোনো মাঝবয়েসি কিছু লোকজন, আর একটা-দুটো করে খুলতে থাকা পান-বিড়ির দোকান আর সেখান থেকে ভেসে আসা পুরোনো ট্রানজিস্টারের গান – মনটাকে অনেকদুরে নিয়ে চলে গেল সেদিন, অনেকদিন পরে।

সম্বিত ফিরলো গড়গড়ি দা-র ডাকে – “গুড মর্নিং”।
হাসিমুখে এগিয়ে এলেন গড়গড়ি দা। “কেমন দেখছ শিলিগুড়ি?”।
যেমন দেখছিলাম, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মত ক্ষমতা আমার কোনদিনই ছিলনা। তাই, শুধু বললাম, “দারুণ সুন্দর”।
কিন্তু, ঠিক জানিনা, গড়গড়ি দা-র চোখের কোনায় লেগে থাকা হাসি দেখে মনে হল, তিনি বুঝেছেন আমার বুঝিয়ে বলতে না পারা কথাটা।

মুশকিল হল, এতসব কথা বলতে বলতে কখন যে বেলা গড়িয়ে গেল খেয়ালই করিনি! ওরে, ৮ টা বাজে যে রে, তাড়াতাড়ি কর সব, বেরোতে হবে যে!
হুড়মুড় করে গরম গরম চা, ব্রেড-ওমলেট খেয়ে নিয়ে মালপত্র তুলে ফেলা হল গাড়িতে। ব্যাস, এবার শেষ মূহুর্তের বাঙালীর নিটপিট কোনোরকমে কাটিয়ে উঠে, গাড়ীতে ওঠা। আর...গাড়ী ছাড়া।
দাঁড়ান দাঁড়ান। এক মিনিট।
বিশ্বাস করুন, বাঙালীর, “গাড়ী ছাড়ার জন্যে রেডি” বলা আর সত্যি করে “গাড়ী ছাড়ার” মধ্যে একটা বিশাল তফাৎ আছে।
তো, শেষ পর্যন্ত সেই অসম্ভব কাজটা করে ফেলাই গেল।
গাড়ী আস্তে আস্তে পেরিয়ে গেল শহরের গণ্ডী, হু হু করে চলতে লাগল লম্বা ফাঁকা রাস্তা ধরে, রাস্তার দুধারের ক্রমশ ঘন হতে থাকা লম্বা লম্বা গাছগুলো পিছিয়ে যেতে লাগল, দৃষ্টির বাইরে। জীবনের পেরিয়ে যাওয়া দিনগুলো কি এভাবেই আস্তে আস্তে পেরিয়ে যায় দৃষ্টিসীমার বাইরে? হয়ত। টাটা সুমোর পেছনের সিটে বসে, মুখ ঘুরিয়ে নিলাম সামনের দিকে।

দেখতে দেখতে, গল্প-আড্ডার মধ্যে দিয়ে পেরিয়ে যেতে লাগল যাত্রাপথ। গড়গড়ি দা আমুদে লোক – পথের ক্লান্তি বুঝতে দেননি একবারও। গড়গড়ি দা-র কল্যানে এই যাত্রাপথটা শুধুই একটা রাস্তা ছিল না, হয়ে উঠেছিল একটা গল্পকথা, একটা চলমান জীবনযাত্রার কাহিনী। মুশকিল হল, আমি আবার চিরকালই পড়াশনোয় কাঁচা, তাই এসব তথ্যজাতীয় জিনিসপত্র ঠিকঠাক মনে রাখতে পারি না। তবু, পরে একবার চেষ্টা করব হয়ত, সেইসব জীবনযাত্রার কাহিনী আপনাদের শোনাবার। আপাতত এটাই বলি, যে হঠাত যখন আমাদের গাড়ীটা একটা সুদুরপ্রসারিত পাহাড়ঘেরা উপত্যকার পাশের সুন্দর রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গেল, আর গড়গড়ি দা বললেন – “নেমে পড় সবাই”, বুঝলাম, এসে গেছি আমাদের বহুপ্রতীক্ষিত “হিলে”তে।

পথ চলা

গাড়ী থেকে নেমে, খানিক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম সামনের জঙ্গল-মোড়া পাহাড়টার দিকে তাকিয়ে। ৫ মিনিট, ১০ মিনিট? জানি না, খানিক্ষণ পরে মনে হল, শুরু করা উচিৎ এবার পথচলা।
মানুষের তৈরি শেষ স্থাপত্য, একটা ছোট গেট, যেটা ভার্সে রডোডেনড্রন স্যাংচুয়ারির শুরু নির্দেশ করছে, পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম এক অচেনা পথে। দুধার থেকে নুয়ে পড়েছিল গাছেরা, পথে ছড়িয়ে ছিল তাদের ঝরে পড়া পাতা, কিছু রঙীন, কিছু বা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, আর ঘন হয়ে এসেছিল অন্ধকার সেই পথের উপর। কখন যেন এগিয়ে গিয়েছিল বাকিরা, বুঝতে পারিনি। পিঠের ব্যাগটা আর ভারী লাগছিল না। রোজকার ভারী হয়ে আসা হাওয়াতে কষ্ট করে টানা শ্বাস কখন যেন হালকা হয়ে এসেছিল। আর, পা থেমে থাকেনি, ভাবতে হয়নি কিছু তাকে, নিতে হয়নি কোনো পদক্ষেপ, এ রাস্তা এমন এক রাস্তা, যে চলতে বলে, অনুভব করতে বলে, টেনে ধরে না পিছনদিকে, কাউকে।

হাঁটছিলাম। হ্যাঁ। হাঁটছিলাম।
পরবর্তী দুটো দিন, হয়ত বলতে গেলে অনেককিছুই বলার মত ছিল। কাঞ্চনজঙ্ঘা, দুধসাদা পাহাড়চূড়ো, ঘন জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়সারি, আমাদের ট্রেকার্স হাটের কেয়ারটেকার “পুসাই দাজু”, আড্ডা-গল্প, নতুন সহযাত্রীদের সঙ্গে সল্পালাপ – এ সবই ছিল।
কিন্তু, আজ লিখতে বসে, যেটা শুধু মনে পড়ছে, যে আমি হেঁটেছিলাম, অনেক অনেক পথ। আর সেই পথ আমাকে অনেক কিছু বলেছিল। শিখিয়েছিল। জানিয়েছিল।
বলেছিল – এগিয়ে যেতে।
শিখিয়েছিল – বিনম্র হতে।
জানিয়েছিল – না থামতে।
ঝিরঝিরে বয়ে যাওয়া হাওয়া, পাতার সঙ্গে সঙ্গে বুকের মধ্যে শিরশিরানি, পাখিদের অনর্গল কিচিরমিচির - জানি না কেন মন উদাস হয়ে যাচ্ছিল বার বার। পাগল মন, সে কি আর বাঁধা পড়ে থাকে, বার বার ফিরে যায় তার প্রিয় জায়গায়, সে যত সহস্র-যোজন মাইল দুরেই হোক না কেন।

অবশেষে নামার পালা, ফেরার পালা।
এক মনকেমন করা রবিবারের সন্ধ্যেতে ফিরে এলাম শিলিগুড়ি শহরে। গড়গড়ি দা-র থেকে এবার বিদায়ের পালা। চিরাচরিত সেই চোখের কোনে হাসি নিয়ে বললেন, তোমাদের সবাইকে ধন্যবাদ। হাসিমুখে গাড়িতে উঠে হাত নাড়তে নাড়তে মিলিয়ে গেলেন ব্যস্ত শহরের মধ্যে, রোজকার মত।

খাণিক্ষণ তাকিয়ে রইলাম যেদিকে চলে গেলেন সেই দিকটায়। একটি সাধারণ লোক, এই শহরের হাজার হাজার লোকেদের মধ্যে একজন, বার বার ফিরে যান পাহাড়ে, অথবা কখনো গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন কন্যাকুমারী সফরে, রাত কাটান পথের ধারে তাঁবু খাটিয়ে, জ্বেলেদের থেকে মাছ নিয়ে শিকে গেঁথে আগুনে ঝলসে রান্না করে খেয়ে, আর তারপর আবার ফিরে আসেন দৈনন্দিন জীবনে।
আর, যখন ফিরে যান একেকটা সফর সেরে, বলেননা, আবার দেখা হবে। হাসিমুখে ফিরে যান শুধু।
একজন অসাধারণ অনুভুতিশীল, যথাসময় আড়ালে থেকে জীবনযুদ্ধের কৌশল শিখিয়ে যাওয়া একজন মানুষ, কি সহজে মায়ার বাঁধন কাটিয়ে উঠে ফিরে যান। আবার পরের দিনটা বেঁচে থাকতে, বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখতে এই পৃথিবীটাকে।

ফিরে তাকালাম, নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে ওঠার চলমান সিঁড়িটার দিকে।
একটাই তো মায়ার বাঁধন রয়ে গ্যাছে, সেই অনেক দুরে আমার শহরে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম প্ল্যাটফর্মের দিকে - ট্রেনের হুইসল শোনা যাচ্ছে দূর থেকে।

আজকে ফিরে গেলাম, কিন্তু হয়ত কোনদিন ফিরে আসব, এই পাহাড়ে, বা কোনো এক সমুদ্রে, যেদিনকে থাকবে না আর কোনো মায়ার বাঁধন।

সেদিন হয়ত আর ফিরে যাবনা, শুধু থেকে যাবে সব স্মৃতি, আর যত অনুভুতি।