Thursday, April 27, 2017

নাচুনে

নাচতে আমি একদমই পারিনে।

গাইতে পারিনে, বাজাতেও নয়, তবে শুনতে আমার মন্দ লাগেনা সেরকম। তাই, গানবাজ না হলেও, গানবাজনা টা আমার ভালোই লাগে।

সেদিন, গাড়ী চালাচ্ছিলুম, রাস্তা দিয়ে, গড়গড়িয়ে। গাড়ীর ধর্মই গড়ানো, তাই আমি আপত্তি করিনিকো। কিন্তু, কানে কোনো গান না আসলে, আমার বড় আপত্তি হয়।

আজকাল চাইলে গাড়ীতেই গান শোনা যায়। মজলিশী না হলেও, রাস্তাতে সময়টা গড়গড়িয়ে কেটে যায়।

বোতাম টিপে গান চালিয়ে দিতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না। গাড়ী আর গান একসাথে চলতে থাকে।

নাচতে না জানলেও, তাল ঠুকতে অসুবিধা কোথায় - আমি মনে করলুম। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। তাছাড়া, গাড়ী ঠোকার থেকে তাল ঠোকা অনেক বেশী শ্রেয় বলেই আমার মনে হল।

ঠুকতে শুরু করলাম, গানের তালে, পায়ের তাল। হঠাৎ খেয়াল হল, গাড়ীটাও যেন নাচছে।

বেশ আশর্য হলুম, গাড়ী কি নাচতে পারে!
মানুষ নাচে, বেড়াল নাচে, এমনকি হাতিও নাচে এরকম কথা শুনেছি বটে, কিন্তু গাড়ী এর মধ্যে কোন শ্রেণীতে পড়ে সেটা আমি জানিনেকো!

এমনকি, গাড়ী কোনো প্রাণী কিনা সেটা নিয়েও আমার মনে যথেষ্ট সন্দো হল।

আচায্যি জগদীশ চন্দ্র বোস যদিও বলে গেছিলেন, গাছ-টাছেরও নাকি প্রাণ আছে। গাড়ী যে গাছ নয়, সে নিয়ে আমার কোনো সন্দো ছিলনাকো, তবে কিনা টাছ নিয়ে আচায্যি মশাই কিছু স্পষ্ট করে বলে যাননি!

তেনার ঠিকানাটাও আমার জানা ছিলনাকো যে গিয়ে একবার জিগ্যেস করে আসব।

মনের ভুল ভেবে গানে মন দেওয়াটাই আমার কাছে বুদ্ধিমানের মনে হল, এবং নিজের বুদ্ধিতে আমি নিজেই চমৎকৃত হলুম!

"লুঙ্গি ড্যান্স" চলছিল, গানের কল থেকে, কলকল করে বয়ে যাচ্ছিল কানের মধ্যে দিয়ে।

কানে গান আসামাত্র আমার পা শুরু করল, তাল ঠুকতে, তালে তালে।

গাড়ীও আবার নাচতে আরম্ভ করল, একই তালে!

যারপরনাই আশ্চর্য হলুম - গাড়ীও যে লুঙ্গি, আর সেটা পরে নাচের মাহাত্ম্য বোঝে, এটা আমার জানা ছিলনাকো!

মনে মনে পণ করে রাখলুম, যে বাড়ী ফিরেই কটা লুঙ্গি জুড়ে গাড়ীকে পরাতে হবে। কারুর ইচ্ছে অপূর্ণ রাখার ইচ্ছে আমার যথার্থ মনে হলনা একদমই।

পরের গান - "আ-পড়ি পোড়ে পোড়ে" শুরু হতেই তালও শুরু হল, আমার পায়ে। তৎক্ষণাৎ আমারও পড়ে যাবার উপক্রম হল - গাড়ীও তাল ঠুকতে শুরু করল দেখে।
আমার গাড়ী যে দক্ষিণ ভারতের ভাষা বোঝে এটা আমার একদমই জানা ছিলনা!

একজন বাঙালীকে একটি দক্ষিণ ভারতীয় গাড়ী বিক্রি করারও কি অর্থ হতে পারে, সেটিও আমাকে ভাবিয়ে তুলল যথেষ্ট।

ভাবতে আমি মোটেই ভালোবাসিনে, বরং ভাবানোতেই আমার আনন্দ! কিন্তু আমার গাড়ী যে আমাকেই ভাবিয়ে তুলল, এটা ভাবতেই আমার বেশ ভাবনা হল! 

বাধ্য হয়ে ভাবতে বসলাম, গাড়ীরই সিটে।

তখনই - ইউরেকা!!

আমার পায়ের তাল যে গাড়ীর পাদানি তে প্রসারিত হয়েছিল, আর তাতেই যে তার টালমাটাল অবস্থা হয়ে বেচাল করছিল, এটা আমার মাথায় বিদ্যুতের মত খেলে গেল!

আর সেই বিদ্যুতের ধাক্কায় আমি খানিক তড়িতাহত হয়ে বসে রইলুম!

এর পরে, তালে তালে গাড়ীর এই নাচে আমার আর কোনো আপত্তি রইল না।

Wednesday, March 8, 2017

বিরক্তিকর

- কি বিরক্তিকর দেখেছেন!

- কোন ব্যাপারটা বলছেন বলুন তো?

- আরে, এই যে আপনার চোখের সামনেই তো দেখছেন!

- চোখের সামনে তো দেখছি "হিংসা কোরো না, তোমারও হবে" লেখা আছে কালো ধোঁয়া ছাড়া ট্রাকটার পেছনে!

- আরে মোলো যা! আমি বলছি, ওই ওদের কথা! ওই যে দাড়িগুলো ঝুলছে, অদ্ভুতভাবে!

- ও আচ্ছা! হ্যাঁ, এই খাসিগুলো আসলে এখানেই ঘাস খেতে ছেড়ে রাখে। কিন্তু খাসির মাংস তো অত্যন্ত উপাদেয় জিনিস মশায়! বিরক্তিকর কেন হবে?!

- আপনি কি ইচ্ছে করে আমাকে হ্যাটা করছেন?!

- পাগল হয়েছেন! সেরকম কোনো ইচ্ছেই আমার নেই!

- তাহলে বুঝেও বুঝছেন না কেন?

- মাইরি বলছি, যেটুকু বললাম, তাছাড়া আর কিছু বুঝতে পারছি না বলেই বুঝছি না! আপনি বরং একটু খোলসা করে বললে সুবিধে হয়, নাহলে এখুনি আমার মাথা ধরে যাবার সম্ভাবনা!

- সামনের ওই মিনি ট্রাকগুলো দেখুন।

- দেখলাম।

- কি দেখলেন?

- বেশ কিছু লোক গাদাগাদি করে বসে আছে, আর লাফাতে লাফাতে গাড়িটা যাচ্ছে।

- ওইটেই বিরক্তিকর।

- কেন? আপনি তো ওই গাড়িতে বসে লাফাচ্ছেন না!

- আচ্ছা মুশকিল হল! আমি সেকথা বলছি না!

- তাহলে কি বলছেন?

- ওই ছাগলদাড়ি, লুঙ্গির উপর লম্বা ফতুয়া, মাথায় একই সাদা টুপি - জাস্ট অসহ্য!

- আপনার থেকে টাকা পয়সা নিয়েছে নাকি কিছু কেনার জন্যে?!

- আপনি মাইরি বেকার ঘোরাচ্ছেন ব্যাপারটা! আমার ওদেরকেই সহ্য হয় না!

- সেটা ঠিক! আমাদের থেকে পশুপাখিরা অনেক ভালো, এটা আমিও মানি।

- আপনি ওদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করলেন?

- না, মানে, আমরা সবাই হোমো স্যাপিয়েন্স বলেই জানতাম!!

- আমি সেটা বলছি না আপনি ভালো করেই জানেন! ওদের এই অশিক্ষিত আচার-বিচার একেবারেই সহ্য হয় না! যেখানে সেখানে ভীড় করবে, রাস্তাঘাটে চলা যাবে না, নোংরা করবে! দেখুন না, কিভাবে অসভ্যের মত তাকিয়ে আছে এদিকে!

- এইটাই আপনার বিরক্তির কারণ?

- কেন, ভুল কিছু বললাম?

- আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করি?

- করুন...

- দুর্গাপুজোয় ভীড় হয় রাস্তায়। গোটা কলকাতা আর শহরতলি অচল হয়ে যায়। আপনার বিরক্তি লাগে তো?

- কিসের সঙ্গে তুলনা করছেন!! আশ্চর্য!

- শিবের মাথায় জল ঢালতে একগুচ্ছ লোক মাইলের পর মাইল রাস্তাঘাট নরক গুলজার করতে করতে তারকেশ্বর যায়। আশা করি তখনও আপনার বিরক্তি লাগে?

- আপনি বুঝছেনই না ব্যাপারটা।

- প্রশ্নের উত্তরটা দেবেন কি?

- এই প্রশ্নের কোনো উত্তর হয় নাকি!! অদ্ভুত সব মিনিংলেস প্রশ্ন আপনার! আপনি আসলে কোনদিকে বলুন তো?

...
...

- আসুন, আপনার নামার সময় হয়েছে...

- চলুন, আবার কাল দেখা হবে।

- অবশ্যই! যদি আপনার বিরক্তি না লাগে।

- কি যে বলেন! আপনার সঙ্গে বিরক্তি কেন লাগবে?!

- কাল আমি ছাগলদাড়ি, মাথায় টুপি, আর লুঙ্গির উপর ফতুয়া পরে আসব। তাই বললাম...